যুবলীগ নেতা শামীম আটক

Image result for যুবলীগ নেতা শামীম আটকনিজ কার্যালয় থেকে যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে আটক করেছে র‌্যাব। গতকাল শুক্রবার দুপুরে তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর নিকেতনে যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের ডি ব্লকের ৫ নম্বর রোডের ১৪৪ নম্বর বাসার অফিসে অভিযান চালায় র‌্যাব। চারতলা ওই বাসায় শামীমের কোম্পানির নাম জি কে বি কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড।
এর আগে নিকেতন এলাকায় জি কে শামীমের আরেকটি বাসা থেকে তাকে ডেকে আনা হয়। পরে তাকে আটক করেই অভিযান চালায় র‌্যাব। র‌্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম) লে কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম সাংবাদিকদের বলেন, যুবলীগের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জি কে শামীমসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শামীমকে আটক করা হয়েছে। শামীমের অফিসের কর্মচারীদের দাবি, শামীম ছাড়া যে সাতজনকে আটক করা হয়েছে তারা শামীমের দেহরক্ষী। শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানির কর্মচারী দিদারুল আলম সাংবাদিকদের কাছে বলেন, শুক্রবার সকালে নিকেতনের ৫ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর ভবনে শামীমের বাসায় সাদা পোশাকে কয়েকজন প্রবেশ করেন। তারা সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করে শামীমকে সঙ্গে নিয়ে তার প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ১৪৪ নম্বর ভবনে অভিযান শুরু করে র‌্যাব।
বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে ওই বাসায় ঢুকে প্রথমেই দেখা যায় বিশাল গ্যারেজ। গ্যারেজের পাশে কাচ দিয়ে ঘেরা একটি অফিস কক্ষ, এখানে কর্মচারী ও কর্মকর্তারা বসেন। ওই ঘরের পাশে দুটি দামি মোটরসাইকেল রাখা রয়েছে। কক্ষের পাশে দুই পাল্লার একটি কাঠের দরজা। দরজায় দামি কাঠের চৌকাঠ চোখে পড়ার মতো। দরজা দিয়ে ঢুকতেই ভেতরে তিন তলায় যাওয়ার সিঁড়ি। মার্বেল টাইলসের সিঁড়িটিতে রয়েছে নকশা করা কাঠের রেলিং। চারতলা পর্যন্ত উঠে গেছে সিঁড়িটি। পুরো বাসাটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তৃতীয় তলায় শামীমের বসার কক্ষ। প্রায় ৩০ ফুট লম্বা ও ২০ চওড়া কক্ষটি। পুরো কক্ষটিতে দামি বাতি, কাঠ দিয়ে সাজানো। বড় আকারের দুটি টিভি রয়েছে ঘরে। তিন সেট সোফা ও একটি বড় টেবিল রয়েছে। ওই টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে টাকার বান্ডিল, মদের বেশ কয়েকটি বোতল ও অস্ত্র। এগুলো ওই কক্ষ থেকে পাওয়া গেছে। ওই কক্ষের পাশেই আছে শামীমের ব্যক্তিগত কক্ষ।
র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, জি কে শামীম র‌্যাবকে জানিয়েছেন, এখানে প্রায় ২০০ কোটি টাকার এফডিআর আছে। টাকা গুনে বেগ পেতে হয় ম্যাজিস্ট্রেটসহ কর্মকর্তাদের। আর তাদের সঙ্গেই বসেছিলেন জি কে শামীম। পরনে একটি হাফ শার্ট ও প্যান্ট। এই অফিসের চতুর্থ তলায় ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ওয়ার্কিং সেকশন এবং তৃতীয় তলায় অ্যাকাউন্টস সেকশন।
অভিযান প্রসঙ্গে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র?্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। তিনি সাংবাদিকদের জানান, অভিযানে ১৬৫.২৭ কোটি টাকার এফডিআর জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪০ কোটি টাকা শামীমের মায়ের নামে রয়েছে। বাকি টাকা তার নিজের নামে রয়েছে।
এফডিআর ছাড়াও নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় ২৩টি ব্যাংকের ৮৩টি চেকবুক জব্দ করা হয়, যোগ করেন র?্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। শামীমের কার্যালয় থেকে একটি অস্ত্রও জব্দ করেছে র?্যাব।  লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, জব্দ করা অস্ত্রের বৈধতা থাকলেও বিভিন্ন অবৈধ কাজে এটি ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও অভিযানে কয়েক বোতল মদ জব্দ করা হয় বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
শামীমের ব্যক্তিগত সহকারী দিদারুল ইসলাম জানান, শামীমের এই কোম্পানি দেশের একটি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিডব্লিউডির তালিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, “জব্দ করা সব টাকা বৈধ। বর্তমানে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্যই টাকাগুলো অফিসে এনে রাখা হয়েছিল।

কে এই শামীম : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সম্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জি কে শামীম। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগেরও সহ-সভাপতি। জি কে শামীম ঠিকাদার হিসেবেই পরিচিত। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে শামীম মেজো। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় শামীম ঠিকাদারি কাজ করে থাকেন। শুধু তাই নয়, গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজ তিনি করেন। জি কে শামীম এখন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক।

No comments

Powered by Blogger.